পোস্টগুলি

জুন, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সাহিত্যের হরিচরণ, হরিচরণের সাহিত্য

ছবি
কিছু মানুষ আছেন, যাঁদের পরিচয় তাঁদের অনির্বাণ কর্ম। কর্মের প্রজ্জ্বলিত শিখা তাঁদেরকে চিরকাল তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে, সুখ-স্বাছন্দ্য-স্বস্তি নয়, বরং অবিরাম-অবিরল কর্মের তাড়না তাঁদেরকে আজীবন কখনও স্বস্তির বিশ্রাম অথবা আলস্যের নিদ্রায় নিমগ্ন করেনি। খুব নিঃশব্দে, প্রায় চুপিচুপি পেরিয়ে গেল এমনই এক কর্মযোগীর জন্মের একশো তিপ্পান্নতম বর্ষ। তিনি আভিধানিক হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। হরিচরণ তাঁর অভিধান রচনা করেন (১৯৩২-৫১ পর্যন্ত সময়কালে), অভিধান না বলে তিনি ‘শব্দকোষ’ নামকরন করেছিলেন, ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এর পূর্বে উইলিয়ম কেরির দুই খণ্ডে বাংলা অভিধান রয়েছে, যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি’র বাঙ্গালা শব্দ কোষ (১৯১৩), জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস’-এর বাঙ্গালা ভাষার অভিধান (১৯১৭) কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন বঙ্গীয় শব্দকোষ অভিধান হিসেবে অন্য মাত্রা পায়? আভিধানিকের অভিধান রচনার পেছনে যে প্রেক্ষাপট এবং ঘটনা পরম্পরা রয়েছে সেদিকে একটু নজর দেওয়া যাক। যশাইকাটি গ্রামে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা। ১৮৬৭ সালের ২৩শে জুন, তাঁর মাতুলালয় রামনারায়ণপুরে তাঁর জন্ম। হরিচরণের পিতা বা পিতামহ কেউই সে অর্থে পণ্ডিত ছিলেন না...

যে-পথে চৈতন্যদেব হেঁটেছিলেন

ছবি
টালিগঞ্জ মেট্রোর সম্প্রসারিত রুটে মেট্রোর পিলারগুলি গেঁথে আছে যে আদিগঙ্গার খালের বুকে, সেই আদিগঙ্গা যাকে আপনি নিছক একটি পচা দুর্গন্ধময় খাল হিসেবেই চিনেছেন জেনেছেন এবং অদূর ভবিষ্যতে হয়তো সেই খাল বুজে যাবে আমাদের প্রগতির গুঁতোয় সেই খাল একদা ছিল সমুদ্রমুখী গঙ্গার মূল প্রবাহ পথ। কালীঘাটকে উত্তরে রেখে দক্ষিণের দিকে গড়িয়ার কাছে আরও দক্ষিণমুখে এগিয়ে চলা সেই আদিগঙ্গার উত্তর পাড়ে অবস্থিত একটি জনপদ হল বৈষ্ণবঘাটা, এককালে যা ছিল গ্রাম বৈষ্ণবঘাটা। আজকের বাস-গড়িয়ার একটা বড়ো অংশই অতীতের বৈষ্ণবঘাটা গ্রামের মধ্যে অবস্থিত ছিল। দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুস এবং কে কে দাস কলেজ, পদ্মশ্রী সিনেমা হল এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া মহুয়া সিনেমা হল, পাঁচ ও ছ’ নম্বর বাসডিপো এবং কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা গড়িয়া বাইপাস কানেক্টর – এগুলি সবই পড়ে সেকালের বৈষ্ণবঘাটার মধ্যে। গড়িয়ার অন্যপ্রান্তের বোড়াল গ্রামের মতোই বৈষ্ণবঘাটাও ছিল অতি প্রাচীন জনপদ এবং বর্ধিষ্ণু গ্রাম।           ইতিহাস অনুসারে চৈতন্যদেব শান্তিপুর থেকে পুরী যাত্রার পথে তাঁর অনুগামীদের নিয়ে এই গ্রামেই যাত্রা-বিরতি করেছিলেন। সেই থেকে...

কেরি ফওলার স্বপ্ন বোনেন

ছবি
১. জীবনে অনেক কিছুই করতে পারতেন, শেষপর্যন্ত নরওয়ের স্বালভার্ড অঞ্চলে তৈরি করে তুললেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সিড ভল্ট । বীজের ঠিকানা। বলা হয়, পৃথিবীতে শুধু ধানই হতে পারে প্রায় লক্ষ রকমের। তার মধ্যে হাতে গোণা কয়েকরকমের ধানই তো আমরা ঘুরে ফিরে চাষ করি, তাই না? এমনি করে আমাদের অমনোযোগে আর অবিমৃষ্যকারিতায় হারিয়ে-যাওয়া, মুছে-যাওয়া লক্ষ লক্ষ দুর্লভ প্রজাতির শস্যবীজ কেরি ফওলার সংরক্ষিত করে চলেছেন আজও। কুটিল সভ্যতার বিরুদ্ধে এ তাঁর স্বেচ্ছাসংগ্রাম! অনেক চেষ্টায় গত ১৩ হাজার বছরের কৃষি-ইতিহাসের প্রায় সব বীজ তিনি সংগ্রহ করে তুলেছেন! এই বীজগুলি এখানে কার্যত ‘অমর’! পৃথিবীর কাছে কিছু ঋণ রয়ে গেছে আমাদের। সমস্ত জীবনের সাধনা দিয়ে কেউ কেউ সেই ঋণশোধের কাজে মেতে আছেন, এইটা দেখলে মানুষ হিসেবে একটু গর্ব হয়! ২. বিশ শতকের গোড়ায় এইরকম আর-এক সুবিশাল সিড-ভল্ট ছিল লেনিনগ্রাদ শহরে। ১৯৪১-এর ৮ সেপ্টেম্বর এই লেনিনগ্রাদ শহর সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ল হিটলার-বাহিনীর হাতে। জার্মান সমরনায়কেরা এই শহরটির ‘দখল’ চায় না, চায় অবরুদ্ধ মানুষগুলোকে তিলে তিলে শেষ করে দিতে। শুরু হল পরের ৮৭২ দিন ব্যাপী তীব্র অনাহারের এক অভূতপূর্ব মর্মন্তুদ ...

কবিরে ত্যজিয়া রেখেছ কবির এ গৌরব

ছবি
পিজি ওয়ানের শেষ ছ-মাস। আমাদের কোর্স নাম্বার ২.৪, 'বাংলা কবিতা পর্ব ১' অংশে 'রবীন্দ্র কবিতা'। ক্লাস প্রায় শেষের দিকে, পরীক্ষা শুরু হয় হয়। স্টাডি লিভ পড়তে আর কিছুদিন বাকি। আমাদের মাস্টারমশাই জয়দীপ ঘোষ, সকলের ভালোবাসার 'জয়দীপদা'। শেষের দিকের ক্লাস বলে লোকসংখ্যা একটু কম। রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু কবিতা ইতোমধ্যেই পড়ানো শেষ, এইটেই সম্ভবত ওঁর শেষ ক্লাস। আর যেহেতু আমাদের পিজি ওয়ান ফলে বিদায় বেলার সময়ও ঘনিয়ে আসছে। সেই ক্লাসে স্যার যে কবিতাটি পড়াবেন সেটির নাম অসম্ভব । রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর ঠিক আগের বছর অর্থাৎ ১৯৪০-এ প্রকাশিত হয় সানাই কাব্যগ্রন্থ। এটি সেই কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখছেন সম্ভবত ১৯৪০-এর ১৬-ই জুলাইয়ে, শান্তিনিকেতনে। আবারো বলছি, ১৯৪০ সাল, আর একবছর পরেই রবীন্দ্রনাথ মারা যাবেন; অর্থাৎ জীবনের একদম শেষের দিককার একটি কবিতা।  কবিতাটি শুরু হচ্ছে এইভাবে, পূর্ণ হয়েছে বিচ্ছেদ, যবে ভাবিনু মনে, একা একা কোথা চলিতেছিলাম নিষ্কারণে। শ্রাবণের মেঘ কালো হয়ে নামে বনের শিরে, খর বিদ্যুৎ রাতের বক্ষ দিতেছে চিরে, দূর   হতে শুনি বারুণী নদীর তরল রব ...

কাঁহা গেলে তোমা পাই

ছবি
রাতে ঘুমানোর অভ্যেস নেই বহুদিন। গোটা লকডাউন পর্বে মাছের চোখ হয়ে জেগে ছিলাম। কপাল ভালো থাকলে সকালে, না হলে দুপুরে বিকেলে সন্ধ্যেবেলা ঘোমাতে যাই। ক্লান্তিবশত কাল ঘুমিয়ে পড়েছিলাম রাতে। সকালে ঘুম ভাঙলে গান শুনতে শুনতে কিছু একটা বইয়ের কয়েক পাতা ওল্টাই।  তাকের ওপর রাখা কাঁহা গেলে তোমা পাই বইটা চোখে পড়লো। কাকতালীয়ভাবে ফেসবুকে কেউ একজন ক্ষিতীশচন্দ্র মজুমদারের আঁকা ছবি শেয়ার করেছিলেন। সকালেই  বইটা একটু পড়তে ইচ্ছে হল, নতুন কিছু নয় বরং পাঁচ বছর আগে এই বই পড়ে যে পোস্ট লিখেছিলাম সেটা একটু কেটে-ছেঁটে বলি। প্রাচী প্রকাশনী-র একটি ছোটো বই সেদিন কলেজ স্ট্রীটে আড্ডার ফাঁকে, টুলের ওপর উল্টে-পাল্টে দেখছিলাম, কাছে টাকা ছিল যৎসামান্য। দেখলাম, বইটির ছাপা এবং কাগজ খুবই মাঝারি বা খারাপের দিকেই, পড়া যায় এইটুকুই। বইটির প্রচ্ছদ এবং বাঁধাই তথৈবচ, বইটি বিষয়গুণে ভালো লেগে গেছিল, কিনে ফেললাম। মাত্র  আশি টাকা দাম। কাঁহা গেলে তোমা পাই লেখক ড. জয়দেব মুখোপাধ্যায়। বইটা  পড়ার আগেই বইয়ের দোকানী আমাকে এই লেখক-কে নিয়ে একটি দু-লাইনের গল্প বললেন, যে এই বই লেখার অব্যবহিত পরেই লেখক গুমখুন হয়ে যান। আশ্চর্য।...

কিয়ারোস্তামি যারা দেখেছেন যারা দেখবেন

ছবি
২০১৭-র কলকাতা বইমেলা। ঘুরতে ঘুরতে একটা বই চোখে পড়েছিল। সাদা ফটফটে কভার, তাতে হালকা সোনালি ছাপ, তাতে প্রকাশনার নাম এবং ফারসি একটা লেখা। প্রকাশক নোকতা, বাংলাদেশের একটি প্রকাশনা। বইটি ২০১৬-র অক্টোবরে প্রথম প্রকাশিত হয়। বইটির নাম চেরির স্বাদ , সংকলন ও ভাষান্তর করেছেন সন্দীপন ভট্টাচার্য। ভিতরে একটা কথা লেখা ছিল, কিয়ারোস্তামি যারা দেখেছেন যারা দেখবেন । কিয়ারোস্তামিকে সেই প্রথম চেনার মতো করে চেনা। বইটিতে আটটা সাক্ষাৎকার, আটটা কথোপকথন, কিয়ারোস্তামির লেখা কবিতার অনুবাদ, আলোকচিত্রের ইলাস্ট্রেশন এবং অসংখ্য ছবি। আমার অক্ষমতায় এর আগে পর্যন্ত কিয়ারোস্তামির কোনো লেখা পড়া হয়নি বা চলচ্চিত্রও দেখা হয়নি! বইটা একরকম গোগ্রাসে গেলার পর অভিভূত হলাম। তারপরই দেখা শুরু করলাম তাঁর সিনেমা। এই বই আমাকে সমৃদ্ধ করেছে ভীষণভাবে, প্রতিটি লেখা থেকে কিছুটা হলেও ধারণা হয়েছে এক মানুষের সম্পর্কে। একটু হলেও তাঁকে চিনতে পেরেছি।  গোটা বইটার মধ্যে যে অংশটা আমার সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছিল তা কিয়ারোস্তামির কবিতা। অংশটির শিরোনাম নেকড়ে রয়েছে প্রতীক্ষায় । এইরকম একটা শিরোনামই হয়তো আমার আকর্ষণের প্রধান কারণ। A Wolf ...