পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মানববাবুকে কেউ চিঠি লেখে না

ছবি
  ১. মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় চলে গেলেন। এই মুহূর্তে কিছু লেখার মতো অবস্থা নেই। না থাকাই স্বাভাবিক কিন্তু কিছু কথা না লিখলে আমাকে সময় ছেড়ে দেবে না। আজ বলতে দ্বিধা নেই, বাঙালিকে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের সাথে যে ক ’ জন এ শহরে পরিচয় করিয়েছেন হাত ধরে, মানববাবু তাঁদের মধ্যে অন্যতম। যাদবপুরের ছাত্রদের একটা চালু প্রবাদ ছিল, মানববাবু যাকে অনুবাদ করবেন তিনিই পরের বছর নোবেল পাবেন। পাবেনই। একটা উদাহরণ না দিয়ে পারছি না, অবশ্যই মার্কেজ। অনুবাদের পরপরই নোবেল পেলেন।  যে সময়ের মানুষ মানববাবু, সে কলকাতায় অনাবিল ভাবে উৎপল দত্ত এসে তাঁকে থিয়েটারের মহড়া দেখিয়ে জানতে চাইতেন, ‘‘ মানবদা দেখে দিন একটু, কিছু হচ্ছে কি না! ’’ সেই কলকাতায় তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে জ্বলজ্বল করতেন বুদ্ধদেব বসু, নবনীতা দেবসেন, শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিয় দেব, সুবীর রায়চৌধুরী, নরেশ গুহরা। সহজ ভাবে বাদল সরকার এসে তাঁদের ছাত্র হতে চাইতেন। ক্লাসে যতই অন্য মাস্টারমশাই তাঁরই লেখা নাটক পড়ান, তিনি ছাত্র হয়েই বসে থাকতেন চুপ করে। বাঙালির আধুনিকতার অন্যতম স্তম্ভ এই যুগটা। যেখানে কবিতা ভবন আছে। যেখানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সা...

১১ই আগস্ট থেকে স্বাধীনতা, ক্ষুদিরামের মূর্তি ও এক অখ্যাত ভাস্কর

ছবি
প্রতি বছর ১১ অগস্ট শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর ছবিতে টাইমলাইন ভরে ওঠে। শুধু সোস্যাল মিডিয়ায় তো নয়, পাড়ায়-মহল্লায়-রাস্তার মোড়ে অসংখ্য মানুষ গভীর আবেগ ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন তাঁকে। কিন্তু কিশোর বিপ্লবীর যে ছবিটি সবচেয়ে জনপ্রিয়, অধিকাংশ পোস্টারে, ব্যানারে যে ছবিটি দেখতে পাই, সেটি কিন্তু ক্ষুদিরামের কোনও ফটোগ্রাফ নয়, কলকাতা হাইকোর্টের সামনে যে চমৎকার মূর্তিটি রয়েছে, তার ছবি। ভাস্কর্য সম্পর্কে আমার তেমন কোনও জ্ঞান নেই, কিন্তু ক্ষুদিরামের এই মূর্তিটি বড্ড প্রিয়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হয়, ভাস্কর্যটির মধ্য দিয়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে একটা আস্ত সময়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মরণজয়ী সংগ্রামের আঁচে অগ্নিশুদ্ধ হওয়া ওঠা সময়ের স্মারক যেন ওই ন'ফুট লম্বা মূর্তিটি। কিন্তু কে তৈরি করেছিলেন ক্ষুদিরামের এই আশ্চর্য মূর্তি? তাঁর অন্য কোনও কাজের খোঁজ মেলে না কেন? উত্তর নেই। প্রতি বছর ১১ অগস্ট আসে, চলে যায়। শিল্পীর নাম সামনে আসে না। আমরা কেউ জানতেও পারি না এক আশ্চর্য কমিউনিস্টের গল্প। চারের দশকের প্রায় শেষ। সবেমাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে। বিহারের বাসিন্দা তাপস দত্ত শিল্পী হতে চেয়ে চলে এলেন কলকাতায়। ভর্তি হলেন আর্ট ...

অন্ধকার কখনো কখনো আলো হয়ে ঝলসে ওঠে

ছবি
সুতোমু ইয়ামাগুচি মাস তিনেকের জন্য গিয়েছিলেন হিরোশিমায়। ‘গিয়েছিলেন’ মানে, তাঁর অফিস থেকে কাজের সূত্রে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। কাজকম্ম সেরে তিন মাস পর যেদিন তিনি বাড়ি ফিরবেন বলে তোড়জোর করছেন, সেই সকালে, ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট, আকাশ থেকে নেমে এল বজ্র! চোখের পলক না-ফেলতেই মুছে গেল আস্ত এক শহর, তৎক্ষণাৎ মারা গেলেন কমবেশি ৮০ হাজার মানুষ।  ইয়ামাগুচি কিন্তু বেঁচে রইলেন। ঘটনাকেন্দ্র থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ছিলেন তিনি, লোহা ও কংক্রিটের কিছু আড়াল তাঁকে বাঁচিয়ে দিল। কানের পর্দা ফেটে গেল তাঁর, চোখ দুটো সাময়িক অন্ধ হয়ে গেল, শরীরের বাঁ দিকটা ঝলসে গেল বিচ্ছিরিভাবে, কিন্তু বেঁচে গেলেন! শেষপর্যন্ত, কোনোক্রমে ওই অভিশপ্ত শহর থেকে বেরিয়ে এসে দুদিন পর তিনি ফিরে এলেন নিজের শহরে। নিজের বাড়িতে। ওহ্‌, একটা কথা বলা হয়নি। কোনটা তাঁর নিজের শহর? নাগাসাকি!  ৯ আগস্ট সেখানে নামল মৃত্যু। কিন্তু, কি আশ্চর্য, এবারেও নানা ঘটনা-পরম্পরায় তিনি বেঁচে গেলেন! জাপান সরকারের অফিসিয়াল-রেকর্ড মোতাবেক ইয়ামাগুচিই একমাত্র মানুষ যিনি দুটো পরমাণু-বোমার অভিঘাত সামলেও বেঁচে ছিলেন। পরবর্তীকালে, পরমাণুবোমা-বিরোধী পৃথিবীজোড়া যেসব গণ-আন্দোল...

শেষের সেইদিন

ছবি
১৩৪৮ বঙ্গাব্দ। ১৪২৭ বঙ্গাব্দের এক ২২শে শ্রাবণে দাঁড়িয়ে শেষের সেই দিনের দিকে যদি একবার ফিরে তাকানো হয়? এরকমই আর এক ২২শে শ্রাবণ, চলে গিয়েছিলেন পৃথিবী ছেড়ে, রবীন্দ্রনাথ। মৃত্যুকে নিজের জীবনে বারবার প্রত্যক্ষ করে শেষপর্যন্ত মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয় তাঁকেও। কেমন ছিল শেষের সেদিন, দেখা যাক।  পূর্ণিমার অবসানে তখন পুবের আকাশ লাল হয়ে উঠেছে। তারপর আসে সকাল। অমিয়া ঠাকুর কিছু চাঁপাফুল হাতে করে নিয়ে এসে ছড়িয়ে দেন কবির সাদা শালে ঢাকা পা দুটির উপর।‌ সাতটায় আসেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। খাটের পাশে দাঁড়িয়ে উপাসনা করেন, আর পায়ের কাছে বিধুশেখর শাস্ত্রী মন্ত্র পড়তে থাকেন –ও৺ পিতা নো হসি, পিতা নো বোধি, নমস্তেহস্তু মা মা হিংসী–   অমিতা ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের মুখে জল দেন। প্রথমে চামচে করে, তারপর তুলো ভিজিয়ে। শরীর মাঝেমধ্যেই কেঁপে উঠতে থাকে তাঁর। বেঁকেও যায় খানিক। ডাঃ জ্যোতিষচন্দ্র রায় নাড়ি পরীক্ষা করতে থাকেন। অমিতা ঠাকুরের বয়ান থেকে জানা যায়, প্রতিমা দেবী রবীন্দ্রনাথের মন্ত্রণা তাঁর কাছে (অমিতা ঠাকুর) জানতে চান। তিনি প্রতিমা ঠাকুরকে জানান সেই মন্ত্রণা–শান্তম্ শিবম্ অদ্বৈ...

কিঞ্চিৎ রামকথা

ছবি
ছোটোবেলায় বেশ মজা করে রামায়ণ গান শুনতে বসতাম। পাড়ার যে কোনো বাড়ির আঙিনায় হতো গান। মূল গায়েন প্রায় রামের মতোই সাজতেন, কিন্তু অভিনয় করতেন সব চরিত্রেই। গান, নাচ, অভিনয়, কথকতা মিলে বাংলার দ্বৈত-অদ্বৈতবাদী শিল্পের চমৎকার উদাহরণ এই রামায়ণ গান। মনে আছে ‘লবকুশ ’ পালায় লব ও কুশ জিজ্ঞেস করছে রামচন্দ্রকে,      ‘‘বলো বলো, ওহে তুমি কোন রাম?     আত্মায় আছে আত্মারাম     বিষ্ণু নাকি প্রভুরাম!     ঘরের লক্ষ্মী বনে দিল                                 অযোধ‍্যার আর এক রাম। ’’ সত‍্যিকথাটা হলো এই অজস্র রামের অস্তিত্ব সন্ধান করতে গিয়ে আমার ‘আত্মারাম ’ মাঝে মাঝেই খাঁচাছাড়া হয়ে যেত।  ইদানিং সেকালের রাষ্ট্রনীতির নায়কের আধুনিক রাজনৈতিক আঙিনায় নব-অবতার লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং পুরোটাই বিকৃতরূপে। এই বিকৃতির শুরু অবশ্য আজকের নয়। বহুকাল আগে থেকেই। যার ফলে মহাক...

আকাশের পূর্ণিমা আর পৃথিবীর রাখির জন্য

ছবি
কবি লিখেছিলেন, পূর্ণচাঁদের মায়ায় আজি ভাবনা আমার পথ ভোলে। বটেই তো! দিগন্তপ্রসারী ধু ধু-করা মাঠের সামনে কিংবা হিমালয়ের-কোলে-দাঁড়িয়ে-থাকা কোনো নির্জন গ্রামের রাত্তিরে পূর্ণচাঁদের দিকে একটিবার ভালো করে তাকিয়েছেন অথচ তার অলৌকিক মায়ায় মন খানিক পুড়ে যায়নি, এমন বোধকরি খুব বেশি কেউ নেই। কিন্তু আজ এক পূর্ণিমারাতে, কোয়ারেন্টাইন্ড এক সময়ে, নিজেরই বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আমি ভাবছিলাম এই ছবিটার কথা। আচ্ছা, এই ছবিটায় কি কোনো মায়া আছে? ওই-যে কবিরা যেমন লেখেন, সেইরকম পথ-ভোলানো মায়া? ** সামনে দেখা যাচ্ছে চাঁদ। অবিশ্যি তার উলটো পিঠ, যে পিঠ আমরা কখনই দেখতে পাই না। তাই কেমন যেন অধোচেনা ঠেকছে ওকে। সূর্যের আলোয় ভেসে যাচ্ছে তার শরীর। একই আলোয় দূরের পৃথিবীও থৈ থৈ করছে। কিন্তু চাঁদটা কেমন শুকনো, নিষ্প্রাণ, পাথুরে। ওর সমস্ত সোনালী হলুদ রঙ মুছে নিয়ে কে-যেন ওকে এক চিরধূসরতার অভিশাপ দিয়েছে।  এই ছবি দেখতে কি ভালো লাগছে আমাদের? জ্যোৎস্না নেই, রূপকথা সব মুছে গেছে, চরকাকাটা বুড়ি মুখ লুকিয়েছে। সামনে দাঁড়িয়ে আছে যেন এক অভিশপ্ত জড়পিণ্ড।   এই ছবিতে কি কোনো কবিতা আছে? থাকা সম্ভব? ভেবে দেখলুম, এই ছবিটাই একটা পূর্ণকবিতা। ...