পোস্টগুলি

জুলাই, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

পঁচিশ বছর আগের একদিন

ছবি
‘কখন তোমার আসবে টেলিফোন’ সেই আশায় আশায় বসে থাকার দিন তো ফুরিয়ে গিয়েছে কবেই। পাবলিক টেলিফোনে মিটার বাড়ানো বেলা বোসের প্রেমিকদের দিনও আজ অস্তাগত। ঘুপচি কাঁচের ঘরের বাইরে রঙ ওঠা লেখায় ‘STD ISD PCO’-র নস্টালজিয়া আজ আর নেই। আর সেই ঘরের ভিতর কত মিনিটের কত হাসি কত দীর্ঘশ্বাস সব মিলিয়ে গিয়েছে হাওয়ায়, ফোন শেষে ক্যাচ ক্যাচ শব্দে একটা লম্বা কাগজের চলমানতা… ঘুড়ির লেজের মতো বেরিয়ে আসা বিল… এখন সবই ভোকাট্টা। সৌজন্যে মোবাইল ফোন… হাতে হাতে চলভাষ… দূর হয়েছে দূরভাষ।    কিন্তু যন্ত্রটি যখন প্রথম ভারতে এসেছিল তখন কিন্তু তা এতো সহজলভ্য ছিল না। বরং ছিল বেশ দুর্মূল্য। ধনবান হওয়ার স্ট্যাটাস সিম্বল ছিল মোবাইল ফোন। খুব সাধারণ মানের একটা সাদাকালো ফোন, যাতে শুধু ফোনকল আর মেসেজ ছাড়া আর কিছুই করা যেত না, না ছিল ইন্টারনেট, না ছিল ক্যামেরা—তারও দাম ছিল প্রায় ২৫ হাজার টাকা। নিছক হাতে ধরে দেখানোর মতোই জিনিস ছিল সেটা!  পরিসংখ্যান বলছে নয়ের দশকে এমনকি ২০০৫ পর্যন্ত সময়পর্বে প্রতি চল্লিশ জন ভারতীয়ের মধ্যে মোবাইল ফোন ছিল মাত্র একজনের। পাড়ায় একজনের মোবাইল ফোন আছে মানে, তিনি গোটা পাড়ার মধ্যে বিশেষ দ্রষ্টব্...

উত্তমের কাটামুণ্ডু ঝুলবে স্টুডিওর দরজায়!

ছবি
‘‘ হ্যান্ডস্ আপ–হাত তুলে ধরো- ’’ মনে পড়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের  সেই  বিখ্যাত কবিতার লাইন? আপনার পিছনে যদি হঠাৎ দেখেন কেউ বন্দুক তাক করে আছে? বারবার যদি ফোনে খুনের হুমকি পান! আপনি এখন হয়তো পুলিশে খবর দেবেন কিন্ত সত্তরের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তেমনটা সম্ভব ছিল না। আর সেই ব্যক্তি যদি উত্তমকুমার হন, বাঙালির আইকন, তাহলে? ১৯৭০ সাল। কলকাতার টালিগঞ্জ অঞ্চলের নিউ থিয়েটার্সে ‘ বনপলাশীর পদাবলী ’ সিনেমার শুটিং চলছে। একদল লোক হঠাৎই ঢুকে আসে স্টুডিওতে। পাইপ গান তাক করে উত্তমকে বলেন তাদের মিছিলে যেতে হবে। পুলিশি নৃশংসতায় বহু তরুণের নকশাল সন্দেহে হত্যা, তারই প্রতিবাদে এই মিছিল। রাজি হননি উত্তমকুমার। সেট থেকেই কোনোরকমে তৎপরতার সঙ্গে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সুপ্রিয়া দেবী সেইদিন উপস্থিত ছিলেন না। বাড়ি ফেরার পথে এবং বাড়ি ফেরার পর একাধিকবার তাঁর কাছে ফোন আসে, একটাই কথা, ‘‘ পালিয়ে বাঁচবেন ভেবেছেন? ’’ বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এমনটাই ঘটেছিল সেইসময়ের হার্টথ্রবের সঙ্গে। নায়ক -এর অরিন্দম কি ভেবেছিলেন বাস্তবে এমনটা ঘটবে? কলকাতা ছেড়ে বম্বে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন উত্তমকুমার। ইন্ডি...

আমার শহর ইয়ার শ্যাম

ছবি
[মান্টোর স্মৃতিচারণ এগোতে থাকে, অভিনেতা শ্যামের সঙ্গে বন্ধুত্বের পরতগুলো উঠে আসে তাঁর লেখায়। নানা কথাপ্রসঙ্গের পর একটা শব্দে এসে থামেন মান্টো,  হিপটুললহা । তারপর...] পর্ব ২ যেভাবেই হোক ‘হিপটুললহা’ শব্দখানা একটা মানে জানাতে পেরেছে যে আমি বলতে চাইছি যে দৃশ্যের মধ্যে বর্ণনা বেশি হয়ে গেছে, ফলে দৃশ্যের জোর কমে গেছে। মিটিং এ এর পরে, হসরত উপস্থিত ছিল, তার ওই দৃশ্যে বেশ কিছু ক্রিয়াকলাপ করতে হবে। আমাকে যখন আমার মতামত জানতে চাওয়া হল, আমি আবার বললাম, এইবারে একেবারে সচেতন হয়েই বললাম, ‘হসরত, দোস্ত, এইভাবে চাল খেললে হবেনা। অন্যকিছু করো যেটা বেশ ‘হিপটুললহা’ মানে ‘হিপটুললহা’ গোছের কিছু একটা করো দোস্ত’। যখন আমি দ্বিতীয় বার বেশ জোর দিয়ে ‘হিপটুললহা’ শব্দটা বললাম, আমি চারিদিকে সবার প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম, এবং দেখে বেশ উপভোগ করলাম যে শব্দটা সবাই বেশ গ্রহণ করেছে। এবং বাকি মিটিং জুড়ে সবাই এই শব্দটাকে নানাভাবে ব্যবহার করতে লাগলো, যেমনঃ ‘এই জিনিসের কোনও ‘হিপটুললহিটি’ নেই, অথবা ‘এটাকে আরও  ‘হিপটুললহাজাইসড’ করতে হবে। একটা সময়ে অশোক আমাকে বেশ চেপে ধরে বলল ‘এই মান্টো এই ‘হিপটুললহা’ শব্দের মানে কি হে! কোন ভ...

আমার শহর ইয়ার শ্যাম

ছবি
[সাদাত হাসান মান্টো (سعادت حسن منٹو‎‎‎), পরিচিত এবং বিতর্কিতও খানিক। আজও তাঁকে নিয়ে তৈরি হওয়া সিনেমা বিভিন্ন হলে মুক্তি পায় না, বাণিজ্যিক সফলতা তো দূরস্থ। বারবার বিভিন্ন লেখার জন্য তাঁকে পড়তে হয়েছে অশ্লীলতার দায়ে। পার্টিশনের অনিবার্যতায় ছিন্নমূল এই মানুষটি আমরণ বম্বের স্মৃতিকে ভুলতে পারেননি। মান্টোর এক অভিন্ন-হৃদয় বন্ধু ছিলেন অভিনেতা সুন্দর শ্যাম চাড্ডা। বম্বে টকিজের সেই সোনালি দিনগুলো কেমন ছিল? শ্যামের মৃত্যুর খবর মান্টোকে অবসাদগ্রস্ত করে, তার লেখায় উঠে আসে চলচ্চিত্র জগতের নানান কিসিমের স্মৃতিচারণ। সেই রঙিন স্মৃতি নিয়েই আজ থেকে শুরু হল ব্লগের নতুন ধারাবাহিক, 'আমার শহর ইয়ার শ্যাম'। আজ তার প্রথম কিস্তি...] পর্ব ১ তারিখটা ছিল তেইশ কিংবা চব্বিশে এপ্রিল। আমার ঠিক মনে নেই। আমি লাহোরের এক মানসিক হাসপাতালে, বিস্মৃতির কামরা থেকে স্মৃতিগুলোকে স্থিতধি করছিলাম, সেখানেই এক সংবাদপত্রের পাতায় আমি প্রথম খবরটা পড়ি, শ্যাম আর নেই। আমি তখন এক অদ্ভুত অবস্থায় চলে গেছিলাম, সচেতন আর সম্পূর্ণ অচেতন এই দুই অবস্থার মধ্যে একেবারে নিলম্বিত হয়ে রয়ে গেছিলাম। এটা স্থির নির্ণয় করাও যথেষ্ট কঠিন হয়ে ...

ভারতবর্ষের খোঁজে: সুকুমারী ভট্টাচার্য— এক অনন্ত অন্বেষা

ছবি
তাঁর জন্ম হয়েছিল এক বাঙালি খ্রিশ্চান পরিবারে, একে ‘বিধর্মী’ তায় ‘মেয়েমানুষ’ (এই শব্দটি নিয়ে তিনি মজা করে বলতেন, ‘মেয়েমানুষ’ অর্থাৎ আগে ‘মেয়ে’ পরে ‘মানুষ’) কাজেই তাঁকে সংস্কৃত পড়ার অধিকার দেয়নি ‘সমাজের মাথা’রা। কিন্তু সত্যিকারের মেধার দীপ্তি কবে আর চাপা থেকেছে! সমগ্র পৃথিবী তাঁকে চিনেছে ভারতের সংস্কৃত সাহিত্য ও ইতিহাসের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অধ্যাপক হিসেবে, তিনি প্রখ্যাত ভারততত্ত্ববিদ্‌ সুকুমারী ভট্টাচার্য। আজ ১২ জুলাই ২০২০, তাঁর জন্মশতবর্ষের সূচনা।  এক  ‘ইন্ডোলজি’ বা ‘ভারততত্ত্ব’ – ধারে-ভারে বেশ ভারী একটা শব্দ, চর্চার ক্ষেত্রটিও খুব একটা সহজ নয়। নিছক ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান বা পুরাণ বিশ্লেষণ নয়, আবার এই তিনেরই সমন্বয়। তারই সঙ্গে মিশে থাকে রাজনীতির অতীত আর বর্তমান নির্মাণ, বিশ্বাস, সংস্কার, নৃতত্ত্ব, অর্থনীতি আরও কত কী। এক কথায় প্রাচীন ভারতের চিত্তাকর্ষক অথচ জটিল এক রোমাঞ্চের অন্বেষণ। বেদের মন্ত্রে যেখানে মিশে থাকে ক্ষুধার স্বর, অসহায় মানুষের ভীতির প্রচ্ছদে আঁকা হয় দেবতার গ্রাস, ঘটে দেবতার জন্ম। সৃষ্টির ওপার বিস্ময়ে জাগরূক হয় উপনিষদ, স্বয়ং মৃত্যুকেও যেখানে প্রশ্নে প্রশ্নে জর্...