এসব সকালের নাম মহালয়া সকাল


শরৎকাল নিয়ে আমার একটি লেখা। অনেক খারাপের পরেও একটা শরৎ আসছে। এ লেখাটা কিছুদিন আগের। এটুকুই বলার, এদ্দিন পর খুঁজে পেয়ে লেখাটা পড়ে নিজেই বিস্মিত হলাম।


আজও জানা হল না, মনের কোন গভীরের এলক্যামিতে এসব লেখা তৈরি হয়? এবং কীভাবে তৈরি হয়!

..............



নীল দিগন্তে ফুলের আগুন লাগবে। শিউলি আর ছাতিমের গন্ধে বারান্দা ভরে যাবে। খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যাবে আমার। কেমন নেশা নেশা। পরলোক পরলোক। তেনারা ঘুরে বেরাচ্ছেন বাতাসে। আমি মানুষ দেখতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ব। ভাবব, অত আগে রবি ঠাকুর কীভাবে লিখলেন, ‘‘নিতে চাও বলে ফিরাও আমায়!’’


একটা জাতি জেগে ওঠে সংগীতে। ঘুমায় সংগীতে। জন্মায়, প্রেম-বিয়ে করে, ডিপ্রেশন আটকায়, মারা যায় সংগীতে।


মহালয়ার মত এক্সপেরিয়েনশিয়াল কাজ দুনিয়ার কোন জাতির আছে? হাসি-কান্না একাকার হয়ে যায়। চাবুক। শিল্পের চূড়ান্ত অবস্থান। যা মানুষেরও অধরা। অধরা মাধুরী হয়তো বা!


দাদুর সাথে আজ আবার পেনশন তুলতে যাব। গড়িয়াহাটের সেন্ট্রাল ব্যাংকে। তারপর জলযোগ থেকে চারটে চকলেট কেক কিনে ফিরব। মামাবাড়ির পাশের লেবুগাছে পুজোর রোদ এসে পড়বে। হাতপাখা আর ছুটিছুটির দিন। দাদু গুনেগুনে দুটো হজমলা দেবে অনেক বায়নার পর। ঢাকাটা এমন ভাবে খুলবে যাতে হাওয়া ভেতরে না ঢুকে পড়ে। 


আবার আজ মামার সাথে দেখা হবে। বামপন্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন করবে মামা। জানতে চাইবে থিয়েটার নিয়েও। আমায় উত্তর দিতে হবে। মামা চিন্তিত হয়ে ফিরে যাবে। সারাজীবন একা থাকবে। বিয়ে করবে না।


দাদাই-নানির উত্তর কলকাতার বাড়িতে মা-বাবার সাথে যাব আবার আজ। আমাদের গলা পেয়ে নানি এগিয়ে আসবে। খোঁড়া পায়ে। লাফাতে লাফাতে। ‘‘মানু আইছিস!’’ কি আবেগ! যেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গাইছেন! সারা পাড়া ডাকবে, দিদিমণি দিদিমণি। সবাইকে লজেন্স দেবে নানি। দাদাই শিকারের গল্প বলবে।


ভবানীপুরে বড়োপিসির বাড়ি তো জমজমাট। সব দাদা-দিদিরা তেড়ে বসে আছে। খুব হুল্লোড় হবে আজ। গঙ্গাকল দিয়ে জল গড়াবে। রাস্তার উপর দু-বাড়ি জোড়া বারান্দায় হাতে হাত ধরে নেবে দুজন। ওদের বিরাট একটা বটগাছ ঢেকে রাখবে। সেই গাছের গোড়ায় ঘুমিয়ে পড়বে কুকুরেরা। তারপর আমরা গঙ্গা যাব। খাওয়া দাওয়া। গোটা ভবানীপুরের নেমন্তন্ন। সারারাত ধরে আড্ডা।


দিন শেষে আমার কলেজের প্রথম প্রেমিকার অভিমান হবে। এসেএমএসে লিখবে, ‘‘তোর আমার জন্যেই সময় নেই, না রে!’’


আমি ওকে শান্ত করব। বলব, ‘‘এই বোকা। এই তো আমি। একদম কান্নাকাটি নয়।’’


তারপর রোদ উঠবে। নভেম্বরের রোদ। আমরা ময়দানের দিকে এগিয়ে যাব। ঢাক নরম হয়ে আসবে। হারাবে আলো।


আবার একটা হেমন্ত আসবে।


বোলপুরে গিয়ে রবি ঠাকুরের গান গুনগুন করুন। বা, না গিয়ে। আপনি এমনিই বোলপুর দেখতে পাবেন। টের পাবেন।


‘‘মায়ের পায়ের জবা হয়ে’’ গেয়ে উঠুন। আপনি নাকে শ্যামাপোকার গন্ধ পাবেন।


তানসেন বাজালে মেঘ থেকে পানি আসে। রচিত হয় মেঘদূত।


শিল্পীরা দেখতে পান। শিল্প গভীর সাইকোলজিক্যাল এলকেমি। সুমন অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘‘প্রতিটি দেশের যেমন ল্যান্ডস্কেপ থাকে, তেমনি মিউজিকস্কেপ ও থাকে।’’


সেই স্কেপ থেকেই উঠে আসেন শিল্পী। তিনি যা কিছু করেন, তার আগের সমস্ত উচ্চারণ তার ভেতর ফিরে ফিরে আসে। মহাকালের সাথে সংলাপ চালান তিনি। দেখতে পারেন তাই, যা আর কেউ দেখতে পারে না। আগামী।


নবারুণ বলতেন, কোনো স্পটে গিয়ে লেখক দুমিনিটে যা দেখে নেন, সারা জীবন তা দেখতে পারেন না বাসিন্দারা। খারাপ সময়ে আমি ভেঙে পড়ি না তাই। লেখায় সেই সময়কে ব্যবহার করি। রাখালদাসবাবুর কথাই ভাবুন। মাটির ভেতর যে আস্ত একটা সভ্যতা আছে, উনি অনুমান করলেন। এই অনুমান তো কবিতা। নীচের বইটির এ ছবি দেখছেন, সেখানে ডরফম্যান সাহেব ক্লাসে পড়াতে পড়াতে আমেরিকার ইরাক আক্রমণ প্রেডিক্ট করে ফেলেছিলেন।


আপনি বিষণ্ণ। ডিপ্রেশন যাচ্ছে না। মন আর ধকল নিতে পারছে না। ভালোবাসতে পারছে না। নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় শুনুন। স্বপ্ন দেখতে পারবেন। এখানেই শিল্পের জোর। জীবনের মতোই আদত বিশ্বাস তা ফিরে ফিরে দেবে। লাতিন আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ এমনি যে কোনো ম্যাপ ছিল না। মারকেজের লেখাই ছিল তাদের ম্যাপ। ভাষা। 


শিল্পী তা হলে কে?


তিনি কিছুটা গোয়েন্দা, কিছুটা এন্থ্রোপলজির লোক আর অনেকটা সরস্বতীর বরপুত্র। তিনি গান করেন না। তিনি গাইলে গান মন্ত্র হয়ে যায়। লিখলে তা অনুভূতিপ্রদেশের আলো নিয়ে মহাকাল রচনা করে। যুগ যুগ ধরে মানুষ সেখানে মুক্তি পান। সেখানে রবীন্দ্রসংগীতে রক্ত ঝরে পড়ে। শঙ্কর গুহ নিয়োগী হাসপাতাল পরিকল্পনা করেন। সেখানেই বন্ধ কারখানা গেটে বসে ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন শ্রমিকদের শোনান, মুক্তির গল্প।


স্বাধীনতা।


ওই তো মাইকে দেবব্রত বিশ্বাস গাইছেন, ‘‘আমি চঞ্চল হে’’‘‘সুদূর বিপুলা সুদূর’’-এর জায়গাটায় খুলে গেল আকাশ। শরতের আকাশ। বাংলাদেশের আকাশ। আমি দেখতে পাচ্ছি আমার অগ্রজদের আবার। 


ওই তো আমার তরুণ মা-বাবা গড়িয়াহাটে দেখা করছেন। আরেকটু পরেই ওরা হিন্দুস্তান পার্কের দিক দিয়ে হেঁটে ভবানীপুর যাবেন। পূর্ণ-তে বসন্ত বিলাপ চলছে। হাউসফুল। কাল নাকি সত্যজিৎবাবু এসে বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন। সিগারেটের রিং ছেড়ে দেখছিলেন, সিনেমা দেখতে রোজ এত ভিড় হচ্ছে কেন। ভিড়টা শেষ কোথায়। পাশেই এলগিন। ছবি বিশ্বাস উত্তমকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছেন। বলছেন, এবার নিজের আয়ের রাস্তা নিজে দেখ।


বাবা আর জেঠু একটু পরেই যাবেন অরুণ মিত্রের বাড়ি। আমাদের পাড়াতেই থাকেন। সরকারি আবাসনে।  অনুরোধ করবেন, যদি পুজোয় একটা কবিতা পড়তে আসেন বিজয়া দশমীতে।


তারপর ঝগড়া শুরু হবে নীরদবাবু আর রবীন্দ্র দাশগুপ্তর। স্টেটসম্যানে সত্যজিৎ-মৃণালের ত্রুফো নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হবে, জাম্প কাট নিয়ে। ফেলুদা সেটা পড়ে বলবে স্ট্রেঞ্জ!


পরিতোষ সেন পিকাসোকে মিট করবেন। ধরণী ঘোষের সমালোচনা পরে উৎপল রেগে গিয়েও হেসে দেবেন। বাঙালির টাকা থাকবে না। ডিপ্রেশন থাকবে না। গান থাকবে। মন থাকবে। মজা থাকবে। স্থাপত্য থাকবে। রুচি  থাকবে। চিন্তা থাকবে। 


বারীন সাহা ফ্রান্স থেকে ফিল্ম শিখে এসেও অভিমানে ফিল্ম বানাবেন না। গ্রামে চলে যাবেন। কমলবাবু সত্যজিৎকে টোন কাটবেন, ‘‘দারিদ্রে বিরাটত্ব থাকে। এ আপনি বুঝবেন না মানিকবাবু।’’ তারপর আর কথা বলবেন না। নবারুণের প্রথম গল্প পড়ে সুভাষবাবু বাড়ি বয়ে এসে পিঠ চাপড়ে দেবেন। রাজশেখর বসু গড়িয়া থেকে হেটে এসে চিঠি ফেলবেন গড়িয়ার হাটে। 


বাঙালির রাজারহাট ছিল না। ভবানীপুর ছিল। গল্প হলেও সত্যি ছিল। সুনীতি চাটুজ্যে, রাধাপ্রসাদ, অন্নদাশঙ্কর, এম এন রায়, ভূপেন দত্ত ছিল।


ছিল।


মা এক কালে তানপুরা বাজাতেন।


সংসারের চাপে তারপর ‘‘রান্না ঘরে আলো জ্বলে ওঠে।’’ ভাস্কর চক্রবর্তী লিখেছিলেন।


কিন্তু সুর কি সত্যি হারায়?


কিংবা লেখা? বাবার লেখা ভর্তি দুটো ট্রাঙ্ক যেমন খোলাই হল না আজও।


বাবা-মা কখনো তেমন বলেননি তাদের লেখা গানের কথা। সারা জীবন শুধু কাজ কাজ কাজ। কখনো বলেছেন কোনো অনুষ্ঠানের কথা। 


কিন্তু ঝড়জলের রাতের রান্নাঘর থেকে ভেসে এসেছে, ‘‘আমার জীবন নদীর ওপারে’’‘‘কতবারো ভেবেছিনু।’’


মা বাণীচক্রে গান শিখতেন। রবি ঠাকুরের গান। মুরলীধরে পড়তেন। গড়িয়াহাটের ওই রাস্তাটা আমার স্বর্গ। ওরা বাইরে গেলে একা ঘুরে বেড়াই আজও। শরীরের এক্সটেনশন যেন রাস্তাগুলো। সব লেখায় আসবে। অন্য শহরে গিয়ে চোখ বুজলে ভেসে উঠবে।


তবে আমায় অনেক গল্প বলে এই তানপুরা। অনেক।


মার না গাওয়া সুরগুলো আমার বুকের ভেতর তোলপাড় করে। পাগল করে দেয় আমায়। আমায় খায়। আমিও খাই। কেউ বুঝবে না জেনেও ভালোবাসতে ইচ্ছে করে আবারও। একদিন এ বাদ্যি বেজে উঠবে আবার। সভ্যতা যদি সত্য হয়। বাজবেই। 


‘‘কোন সুরে আজ বাঁধিবে যন্ত্র


কী মন্ত্র হবে গাওয়া...’’


বিস্ময় কি? আন্দামানে বেড়াতে গেছিলাম ছেলেবেলায়। সমুদ্রের ধারে বসেছিলাম। অনেকটা সময়। চোখ লেগে আসছিল। অদূরে একটা ডিঙি-নৌকা ভাসছে মনে হল হঠাৎ। কালো, শ্যাওলামাখা।


কাছে গেলাম জলের। দেখলাম, প্রমাণ সাইজের কচ্ছপের পিঠ ওটা। কচ্ছপটি সানন্দে দুনিয়ার একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে চলেছেন সমুদ্রে। কোনো বাধা নেই তার। তাড়া নেই কোনো। যেমন, চতুরঙ্গের শেষে শচীশ ‘‘অসীম অসীম’’ চিৎকারে ছুটে চলে সমুদ্রধারে। রবি ঠাকুরের ‘‘দূরে কোথাও দূরে দূরে’’ বেজেছিল কানে।


আমি অসীমের ধারণা পেয়েছিলাম। কোহেন সুজান গাইছিলেন হয়তো অদূরে, মেঘে ঢাকা তারায়।


এই স্মৃতি বলতে চলে গেলাম আবহমান ক্লাসিকের ধারণায়।  


আমরা কেন ক্লাসিকের কাছে ফিরে যাই? 


বন্ধুত্বই যে আবহমানতার শেষ কথা তা জানতেই হয়তো। 

‘‘বাজলো আলোর বেণু’’দিন পরেই বাজবে। কী হবে বাঙালির বুকে? কী হয়, পথের পাঁচালির আবহ বাজতে থাকে যখন? রবিশংকর যখন বাজাতে বাজাতে ভগবান হয়ে যান!


রবিঠাকুর বলবেন,  ‘‘ক্লাসিকিয়ানার মোহ’’। সুমন বারবার মনে করাবেন এ কথা। ঘটক দেখাবেন, তিতাসের শেষ শটে নদীর পেটে ঘাস জন্মাচ্ছে। সভ্যতা মরে না। মূল উপন্যাসে যদিও ছিল, সভ্যতা মরে। নদী শুকিয়ে যায়। কমলকুমার বলবেন, লেখা মানে তাহাকে ডাকা।


ইতালো কালভিনো তার ‘‘Why read classics’’-এ এই নিয়ে বেশ কিছু জরুরি কথা বলেছেন।


সুমন কিছুদিন আগে বললেন, ‘‘সংগীত একটা নিখিল অভিজ্ঞতা।’’


তিন ভুবনের পারে, বসন্ত বিলাপ, দেয়া-নেয়া ছবিগুলোতে এই বন্ধুত্ব রাখা আছে। হালের ম্যাডলি বাঙালি, ভূতের ভবিষ্যতেও রয়েছে এই প্লুরালিটি, বহুত্ব। আমায় প্রায় রোজ দেখতে হয় ছবিগুলো। এগুলো তো ক্লাসিক না। তবে?


সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন, তুলসী চক্রবর্তী, পাহাড়ি সান্যালরা আজ বাংলা ছবিতে ব্রাত্য। গাস্টিন প্লেসের ভূত। সহ অভিনেতা বলে কিছু নেই আর। যেমন নেই গ্রাম। আছে শুধু অন্ধকার, হিন্দুস্তান রোডের ফ্ল্যাটের লিভ-ইন দম্পতি, সুইগি, ফেসবুক আর বাকুড়ার ঘোড়া!


মা চলে এলেন যেন-বা।


আমরা যারা নারীর সন্ধানে শহর আর শহর সন্ধানে নারীকে চেয়েছি, আসলে চেয়েছি মা-কে, তারা তো আসলে যোনিপথ চেয়েছে। যে রাস্তায় গুরু গাছ হয়ে যান আর গাছ Philosopher.


সুমন কোনো অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ইতালো কালভিনোর ‘‘ইনভিজিবেল সিটিজের’’ কথা। এ উপন্যাসে শহর, নারী, প্রেম, কামনা, স্মৃতি সব এক হয়ে যায়। এ উপন্যাস পড়ার পর আমি আর ঠিক আগের মানুষটা নেই।


আমরা তো মা-কে চেয়েছি আসলে। ঘটককে যেমন মজা করে বন্ধুরা বলতেন, তোকে মা-এ খেয়েছে। নবারুণের মধ্যেও ছিল এই অসম্ভব ক্রেভিং ফর লাভ। সেপ্টেম্বরের সন্ধ্যা বড়ো মায়াময়। রবি ঠাকুর লিখে ফেলেন, তোমায় দেখেছি শারদপ্রাতে। যেন শিকারের আগে হরিণের চোখ। প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে দেখা।  ডাইরিতে লেখেন, যত বার শেষ বয়সে ছবি আঁকেন, প্রথম প্রেমিকার চোখ এঁকে ফেলেন। তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা। জাত কমিউনিস্ট মানিক ডাইরির শেষে মা-মা করতে থাকেন। বিজনের দেবীগর্জনে কালী মঞ্চে উঠে আসে। কমিউনিস্টরা গাল পাড়েন। নবারুণ বলেন, মাদার কাল্ট আবার কি! দেশটাই তো মা। এরা গ্রামার বানাচ্চে বাঞ্চোৎ। এদের গ্রামারটা শেখ। 


জানিনা মানুষ জীবনভর কি খোঁজে। কিচ্ছু জানিনা। শুধু জানি, এ শহরটা আমার মা। এর প্রতিটি শিরা-উপশিরায় আমি পাই নারী, প্রেম, কামনা, স্মৃতি। 


মা। দুনিয়ায় সবচেয়ে আশ্চর্য এ শব্দের সাউন্ড।


মা। আসছেন। 


গুরু-মা-বাবা। আলি আকবর খানের বাড়িতে সন্ধ্যার ক্লাস সবে শেষ হয়েছে। কিছু ছাত্র বেরিয়ে পড়েছেন। কজন গুরুর সাথে আরেকটু কথা বলে বেরতে চান। এদিকে গুরু ক্রমশ ছটফট করছেন। ছাত্ররা কারণ বুঝতে পারছেন না। সবে ৯টা বেজেছে। গুরু বলছেন, ‘‘যাও যাও।’’ 


এক ছাত্র আর না পেরে বলেই ফেললেন, আপনার কি কোনো কাজ আছে? এত ব্যস্ত হচ্ছেন। কিছুটা রাগ আর উদাসীনতা মিলিয়ে আলি আকবর বলে উঠলেন, আরেকটু পর বাবা নেমে আসবেন না! আমায় সুর সেবা করতে হবে তো! 


বলা বাহুল্য বাবা আলাউদ্দিন প্রয়াত হন আগেই।






________________


দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় 

লেখক, সাংবাদিক


---------------------------

ছবি ঋণ: অনির্বাণ দত্ত

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চোদ্দ ভূতের আসরে

পার্টিশনের জীবনভাষ্য: প্রজন্মান্তরের খোঁজ

বুদ্ধের পুতাস্থি: রাখা রয়েছে কলকাতাতেই