'পথের পাঁচালী'-র পটু, বিনি এবং উপেক্ষিত এক মামজোয়ান
১
পথের পাঁচালী-র পটু আর বিনিকে মনে পড়ে?–প্রশ্ন তো নয়, অবরুদ্ধ এই সময়ে চূর্ণী-ইছামতীর জলছোঁয়া বাতাস যেন মায়াবলে চুরি করে সারা শরীর ও মনে ছড়িয়ে দিল নটেগাছ।
–
তা মনে পড়ে বইকি! দুগ্গাকে মনে পড়ে, অপুকে তো ভুলতেই পারি না। তারপর রাণুদি, লীলা, সতু, নীলুদা সবাই একসঙ্গে যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে। হারানো কিশোরবেলা অন্ধকার হাতড়ে মুঠো মুঠো আলো ছড়ায়। নিজের অজান্তেই ঢুকে পড়ি পথের পাঁচালী-র মায়াময় জগতে। তবে নটেগাছের নির্দেশ মেনে আগে পটুর সঙ্গে দেখা করি অপু যেদিন প্রথম বাবার হাত ধরে প্রসন্ন গুরমশাইয়ের পাঠশালায় এসেছিল (পরিচ্ছেদ : চতুর্দশ), সেদিন তো বিচিত্র মজার অভিজ্ঞতা তার হয়েছিল, সে আমরা সবাই জানি। ছেলেদের কেউ দুলে দুলে নামতা মুখস্থ করছে, কেউ বা শ্লেটের উপর চকখড়ি দিয়ে কাটাকুটি খেলে চলেছে। এর মধ্যেই একটি ছেলেকে দেখেছিল অপু, যে আপনমনে তালপাতা চিবিয়ে চলেছে। এই ছেলেটিই তো পটু? কি বলো হে নটেগাছ?
নটেগাছ কথা কয় না। আসলে কথা বলা তার অভ্যাসটাও নয়। সেই কবে থেকে যেন, ঠাকুরমা-দিদিমাদের মুখে সাঁঝবেলার অন্ধকারে সে জেগে উঠত, পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চেপে ডালিমকুমারের দুঃসাহসী অভিযানের মতো ছিল তার উড়াল এবং ঘুমের পরীরা যখনই চোখের পাতায় বুলিয়ে দিত তাদের ডানার পালক, তখনই এক অবকাশে মুড়িয়ে যেত সে,
আমার কথাটি ফুরোলো,
নটেগাছটি মুড়োলো।
কিন্তু সত্যিই তো সে মুড়োয় না, মুড়োনোর ভান করে। স্মৃতির জলধারে বেঁধে ওঠে বারবার। তাই অপুর গল্পের সমান্তরালে চলে পটুর গল্প। প্রসন্ন গুরমশাইয়ের পাঠশালায় আপনমনে তালপাতা চিবোতে থাকা ছেলেটিই যে পটু, তা আবিষ্কার করা গেল পথের পাঁচালী-র অষ্টাদশ পরিচ্ছেদে, 'অপু সেদিন জেলেপাড়ায় কড়ি খেলিতে গিয়াছিল।' প্রথমে গেল বঙ্কাদের বাড়ি। বাবার সঙ্গে বসে বাখারি চাঁছার কাজ করছিল বঙ্কা। ইচ্ছে থাকলেও বঙ্কা অপুর সঙ্গী হতে পারেনি বাবার ভয়ে। ফলে অপু এবার গেল রামচরণ জেলের বাড়ি।
রামচরণ দাওয়ায় বসিয়া তামাক খাইতেছিল; অপু বলিল - হৃদয় বাড়ি আছে? রামচরণ বলিল
-হৃদয়কে কেন ঠাকুর? কড়ি খেলা বুঝি? যাও হৃদে এখন বাড়ী নেই।
বিফল-মনোরথ অপু কড়িখেলার সঙ্গীদের পেল বাবুরাম পাড়ুইয়ের বাড়ির কাছে তেঁতুলতলায়। এখানে জেলেপাড়ার গাট্টাগোট্টা ছেলেদের সঙ্গে কড়ি খেলছিল 'বামুনপাড়ার একজন', সে পটু। খেলায় জিতছিল পটু কিন্তু একসময় রোগাপটকা পটুর কাছ থেকে মেরেধরে কড়ি কেড়ে নেবার চেষ্টা হয়, অপু সাধ্য অনুযায়ী পটুকে মারের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও মার খায়। এই পটুর সামাজিক অবস্থান খোলসা হয় পথের পাঁচালী-র বিংশ পরিচ্ছেদে অপু-দুর্গার চড়ুইভাতির আয়োজনে,
সেদিন তাহার দিদি চুপিচুপি বলে– চড়ুইভাতি করবি অপু?
দুর্গার প্রস্তাব তো আর প্রস্তাবমাত্র নয়, সিদ্ধান্ত। ফলে,
নীলমণি রায়ের জঙ্গলাকীর্ণ ভিটার ওধারের খানিকটা বন দুর্গা নিজের হাতে দা দিয়া কাটিয়া পরিষ্কার করিয়া ভাইকে বলিল–দাঁড়িয়ে দ্যাখ্ তেঁতুলতলায় মা আসচে কিনা–আমি চাল বের ক'রে নিয়ে আসি শীগগির ক'রে-...
এরপর চাল এল, নারকেল-মালায় এল দুই পলা তেল ও অন্যান্য সবকিছু। চড়ুইভাতির মাঝামাঝি সময়ে অপুদের বাড়ির উঠোন ছাড়িয়ে এল বিনি, পটুর দিদি। দুর্গা তাকে বলল,
আয় না বিনি, চড়ুইভাতি কচ্চি- বোস্-
পটুর দিদি বিনির গল্পে নটেগাছের হাত ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় প্রান্তিক মানুষের একটা অন্য পরিচয়ে। পথের পাঁচালী-র সহজিয়া চলনে যেন পয়ার ছন্দের সুরমূর্ছনা, প্রাকৃত আলাপ–
মেয়েটি ওপাড়ার কালীনাথ চক্কতির মেয়ে-পরনে আধময়লা শাড়ী, হাতে সরু সরু কাঁচের চুড়ি, একটু লম্বা গড়ন, মুখ নিতান্ত সাদাসিধা। তাহার বাপ যুগীর বামুন বলিয়া সামাজিক ব্যাপারে পাড়ায় তাহাদের নিমন্ত্রণ হয় না, গ্রামের একপাশে নিতান্ত সংকুচিত হইয়া বাস করে। অবস্থাও ভাল নয়। বিনি দুর্গার ফরমাইজ খাটিতে লাগিল খুব। বেড়াইতে আসিয়া হঠাৎ যেন সে একটা লাভজনক ব্যাপারের মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছে, এখন ইহারা তাহাকে সে উৎসবের অংশীদার স্বীকার করিবে কি না করিবে- এরূপ একটা দ্বিধামিশ্রিত উল্লাসের ভাব তাহার কথাবার্তায় ভাবভঙ্গিতে প্রকাশ পাইতেছিল।
স্তব্ধ হয়ে যাই, সমাজ-মনস্তত্ত্বের অপূর্ব শিল্পায়ন ঘটে শিশু বিনির ভাবনায়! বিস্ময়-রসের রসিকঠাকুর বিভূতিভূষণ প্রতিবাদের নব শিল্পভাষ্য রচনা করে দেন এভাবেই। আর বিনির মুখে উল্লাস ফোটে যখন দুর্গা বলে,
...বিনি এসেছে– ও-ও তো এখানে খাবে–আর দুটো চাল নিয়ে আয় অপু-
খলবলিয়ে হেসে ওঠে নিশ্চিন্দিপুরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ইছামতীর জলধারা, নটেগাছ দুলে ওঠে বিবাগী বাউল বাতাসে। জানান দিতে চায় নটেগাছ, এগোও, আর একটু এগোও না বাপু! থেমে গেলে যে আমার গল্পের খেই থাকে না গো...
সব কিছু ছিল চড়ুইভাতির আয়োজনে, কিন্তু ভুলক্রমে 'লবণকে রন্ধনের উপকরণের তালিকা হইতে ইহারা অদ্য একেবারে বাদ দিয়াছে'! তাতে কি? দুর্গার এই প্রথম রান্না, শিল্প-সৃষ্টির প্রথম আনন্দ। তাই,
মহাখুশিতে তিনজনে কোষো মেটে আলুর ফল ভাতে ও পানসে আধপোড়া বেগুন-ভাজা দিয়া চড়ুইভাতির ভাত খাইতে বসিল।... যুগীর বামুন বলিয়া পাড়ায় জল খাইতে চাহিলে লোকে ঘটিতে করিয়া জল খাইতে দেয়; তাহাও আবার মাজিয়া দিতে হয়। বিনি দু-একবার ইতস্তত করিয়া অপুর গ্লাসটা দেখাইয়া বলিল–আমার গালে একটু জল ঢেলে দেও তো, অপু? জল তেষ্টা পেয়েছে।
অপু বলিল-নাও না বিনিদি, তুমি নিয়ে চুমুক দিয়ে খাও না? তবু যেন বিনির সাহস হয় না। দুর্গা বলিল–নে না বিনি, গেলাসটা নিয়ে খা না!
নীলমণি রায়ের ভিটের জঙ্গলে নিশ্চিন্দিপুরের বাতাস কি অন্য কোনো বার্তা দিয়ে গেল সেদিন? কোনো যান্ত্রিক উপাচার নেই, হাততালি পাবার বিজ্ঞাপন নেই, দুর্গার একটি কথায় বলা হয়ে গেল অনেক কিছুই। ভেতরে যন্ত্রণা ডালপালা মেলল... আমি হেঁটে চলি নিশ্চিন্দপুরের মাঠে, অপু-দুর্গার চড়ুইভাতিতে পাত পেড়ে খাই, আর শুনতে পাই, 'নে না বিনি, গেলাসটা নিয়ে খা না!'
২
চূর্ণীর ঘাটে বসে নটেগাছের মাথা-দোলানো দেখিনি কতদিন! কিন্তু মানসভ্রমণ তো চলে পাখির অনাবিল ডানায় ভর করে। নটেগাছ গল্প করে, "জানো তো, অপুর সঙ্গে পটু আর বিনির দেখা হয়েছিল অনেক পরে। এই চূর্ণীপাড়ের মামজোয়ানে। সে তখন অপূর্ব। অপূর্ব-র গল্প শুনতে 'অপরাজিত' উপন্যাসের পাতা উল্টাই। অপু এখন থাকে দেওয়ানপুর মডেল গবর্ণমেন্ট ইন্সটিটিউশনের বোর্ডিংয়ে। বোর্ডিং-এর,
রাসবিহারীর দল পরামর্শ করিল মামজোয়ানে দোলের মেলা দেখিতে যাইতে হইবে। মামজোয়ানের মেলা এ অঞ্চলের বিখ্যাত মেলা।
অপু খুশির সহিত রাসবিহারীর দলে ভিড়িল।
মামজোয়ানের দোলের মেলায় পৌঁছে অপু ঘুরছিল নিজের মতো। খেলা, ম্যাজিক, সার্কাসে ভরপুর বিরাট মেলার মধ্যে সঙ্গীদের হারিয়ে ফেলেছিল অপু। নিজের মতো ঘুরতে ঘুরতে একটা বইয়ের দোকানে পছন্দ করল আরব্য উপন্যাস। দোকানী দাম বলল আট আনা। হাতে পয়সা থাকলে হয়তো কিনত অপু। সেই বইটা হাতে নিয়ে দেখতে পেল পুটুকে। তার নিশ্চিন্দিপুরের বাল্যসঙ্গী পটু,
-অপুদা? ... এখানে কী ক'রে, কোথা থেকে অপুদা?
অপু বলিল, তুই কোথা থেকে?
-আমার তো দিদির বিয়ে হয়েছে এই লাউখালি। এইখেন থেকে দু-কোশ। তাই মেলা দেখতে এলাম। তুই কী ক'রে এলি কাশী থেকে?
ভাবতে যাচ্ছিলাম অপুর কথা, বাধ সাধল নটেগাছ। পটু-বিনির কথা মনে করিয়ে দেয় সে। কিন্তু অপুকে কি বাদ দেওয়া যায়? জিজ্ঞেস করেই দেখি,
অপুর মনে পড়িল, অনেকদিন আগে দিদির চড়ুইভাতিতে বিনিদির ভয়ে ভয়ে আসিয়া যোগ দেওয়া। গরীব অগ্রদাণী বামুনের মেয়ে, সমাজে নিচু স্থান, নম্র ও ভীরু চোখ দু'টি সর্বদাই নামানো, অল্পেই সন্তুষ্ট।
সেই বিনির বিয়ে হয়েছে লাউখালি। মা মারা গেছে বিনি-পটুর। বিনির বিয়ে হয়েছে খুব সাধারণ পরিবারের দোজবরের সঙ্গে। স্বামী অর্জুন চক্রবর্তীর আগের পক্ষের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আছে দুই বিধবা বোন। এরা যেন বিনির প্রভু। স্বামীর খাবারের দোকান আছে মামজোয়ান বাজারে। পটুর খুব ইচ্ছে দিদির কাছে থেকে মামজোয়ান স্কুলে পড়াশোনা করে। মা-মরা ভাইটাকে কাছে রাখতে চেয়েছে বিনিও কিন্তু রাজি করানো যায় না অর্জুন চক্রবর্তীকে।
হারিয়ে যায় পটু...। অনিশ্চয়তার অন্ধকারে। অপরাজিত উপন্যাসের পরবর্তী পর্যায়গুলোতে আমরা আর বিনিকেও খুঁজে পাই না। বিভূতিভূষণের বিস্ময়জগতে পটু-বিনিরা অনামন্ত্রিত নয়, কিন্তু পথের পাঁচালী-র গল্প তো অপুর গল্প। অপুর সেই জীবনের বিস্ময়ে পটুরা, বিনিরা দুখ-জাগানিয়া, অকালে হারিয়ে যাওয়া দুগ্গাদিদির প্রত্নপ্রতিমা হয়ে আমার চোখে জল বয়ে আনে। সে জল চূর্ণী না ইছামতীর তা আলাদা করতে পারি না। কিন্তু সেই চোখের জলেই বেঁচে ওঠে আমার এক যে ছিল দেশের একটুকরো ভূগোল-মামজোয়ান।
বিভূতিভূষণের অপরাজিত উপন্যাস, আর উপন্যাস ইতিহাস নয়, বাস্তবের অনুকরণ। কিন্তু চূর্ণী তীরের ঠাণ্ডা বাতাসে দুলতে দুলতে নটেগাছ আমাকে সেই ইতিহাসের অন্ধকার ঘরে নিয়ে যেতে চায়, যেখানে ঠাণ্ডা হয় মৃতবৎ শুয়ে আছে অনেক জানা-অজানা গল্পের কুশীলবেরা। ইতিহাসের অন্ধকার ঘরটির তালাটা আমরা খুলছি ১১১৯ থেকে ১১৬৯ খ্রিষ্টাব্দের সীমানায়। নানান বিতর্ক সত্ত্বেও মানতে হবে সেন বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা বল্লাল সেন এইসময় বাংলাদেশের শাসক। বল্লাল সেন শাসনের সুবিধার্থে তাঁর রাজ্যকে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করেন–রাঢ়, বারেন্দ্র, বঙ্গ, বাগড়ি ও মিথিলা। আগে থেকেই অবশ্য বঙ্গদেশ বা গৌড়রাজ্য রাঢ়, বঙ্গ, পুণ্ড্র ও উপবঙ্গ এই চারটি ভাগে বিভক্ত ছিল। শূর বংশের রাজত্বসময়ে পুণ্ড্রদেশের নাম হয়েছিল বারেন্দ্র। আর উপবঙ্গের নাম বগড়ি বা বাগড়ি। এই উপবঙ্গ সম্পর্কে দিগ্বিজয় প্রকাশ-এ লেখা হয়েছে,
ভাগীরথ্যাঃ পূর্ব্বভাগে দ্বিযোজনত্ব পরে
পঞ্চমযোজন পরিমিতো হ্যুপবক্ষোহি ভূমিপ।
উপবঙ্গে যশোরাদিদেশা কাননসংযুতাঃ
জ্ঞাতব্যা নৃপ-শার্দুলবহুলাসু নদীষু চ।।
নদী-জঙ্গল-সমাকীর্ণ উপবঙ্গ বা বাগড়ি ছিল বাউড়ি জাতির বসবাসের জায়গা। সেন রাজবংশের সময়ে বাগড়ি যে যে ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত ছিল সেগুলো হল–অন্ধ্রদ্বীপ, সূর্যদ্বীপ, মধ্যদ্বীপ, জয়দ্বীপ, চক্রদ্বীপ, কুশদ্বীপ, এড়ুদ্বীপ, প্রবালদ্বীপ, বৃক্ষদ্বীপ ও চন্দ্রদ্বীপ। এগুলোর মধ্যে মধ্যদ্বীপ বলা হয়েছে জলঙ্গী, চূর্ণী ও ইছামতীর মধ্যবর্তী স্থানকে। গৌড়ের ইতিহাস গ্রন্থে হাঁসখালি, মামজোয়ান, শান্তিপুর, উলা প্রভৃতি মধ্যদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে। অর্থাৎ মামজোয়ান সেই সুদূর বল্লাল সেনের আমল থেকে তো বটেই, তারও আগের প্রাচীন জনপদ এবং কোনো সন্দেহ নেই বাগড়ির অন্যান্য অঞ্চলের মতোই এখানেও বাস করত বাউড়ি, চণ্ডাল, কৈবর্ত প্রভৃতি জনজাতি। এমনকি বল্লাল সেনের আমলেও কোনো কুলীন, শ্রোত্রিয় বা কষ্ট শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণদের বসবাস এখানে গড়িয়ে ওঠেনি। কারণ বল্লাল সেন যে সমস্ত স্থানে ব্রাহ্মণদের বসতির ব্যবস্থা করেছিলেন, তাদের মধ্যে আজকের নদীয়া, যশোর, খুলনা নোয়াখালী প্রভৃতি অঞ্চল ছিল না। পরবর্তীতে এইসব অঞ্চলে ব্রাহ্মণ ও কায়স্থরা ছড়িয়ে পড়ে এবং অনার্য ঐ সব জনজাতিদের দেবতাদের আর্যায়ন ঘটে। অনেক ক্ষেত্রে দেবদেবীর নামকে সংস্কৃত রূপ দেওয়া হলেও অনেক অনার্য আচার, উৎসব পরিবর্তন করা হয়নি। চড়ক একটি অনার্য উৎসব, যা এখনকার সমগ্র হিন্দুসমাজে গৃহীত। মামজোয়ানের চড়ক এবং দোলমেলা অত্যন্ত প্রাচীন। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের পূজা পার্বন ও মেলা গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে মামজোয়ানের চড়কমেলার পরিচিতি এই মেলায় প্রাচীনত্বের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়। নটেগাছ মাথা নাড়ে। তার সঙ্গে গল্পগাছা করার মাঝখানে একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা বরং পশ্চিমবঙ্গের পূজা পার্বন ও মেলা গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে সেই ১৯৬২ সালে গ্রামটির যে পরিচিতি দেওয়ার হয়েছিল, তা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে দিচ্ছি।
ব্রাহ্মণপাড়া, পালপাড়া, নমঃশূদ্রপাড়া, সর্দারপাড়া, হালদারপাড়া, মুসলমানপাড়া–এমন সাতটি পাড়ায় বসবাস করে ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, মাহিষ্য, কামার, কুমোর, নাপিত, সদগোপ, সর্দার, নমশূদ্র, মুসলমান সব ধরনের জাতির মানুষ। গ্রামটির নামকরণ সম্পর্কে স্পষ্ট অভিমত নেই, যা সর্বজনগ্রাহ্য হতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন, পুরোনো অঞ্জনা বর্তমান চূর্ণী নদীর বাঁকে অবস্থিত এই গ্রামটি জ্যোৎস্নারাতের আলোয় হয়ে উঠত মোমজ্যোৎস্নাময়ী, তা থেকেই নাম মামজোয়ানী। দ্বিতীয় অভিমত হল, মাম সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ '
আমি, আর জোয়ান হল শক্তিশালী নবযুবক। শ্রেষ্ঠত্ব বোঝাতেই এই নাম। তবে মামজোয়ানের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে দ্বিধা নেই। সাতাশটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয়েছিল একটি পরগনা, শ্রেষ্ঠ বলেই এই গ্রামের নাম অনুসারে মামজোয়ান পরগনা তৈরি করা হয়। এই পুরনো জনপদটির ইতিহাস লিখব আগামী লেখায়। নটেগাছ শুধু বসে থাকবে চুপচাপ...

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন